Wellcome to National Portal

বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়চট্টগ্রামের তথ্য বাতায়নে আপনাকে স্বাগতম

*** “সমবায়ের যাদুস্পর্শে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুল্যবোধের চর্চা ও সমবায় ভিত্তিক সমাজ গঠন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করি” *** রুপকল্প টেকসই সমবায়, টেকসই উন্নয়ন *** অভিলক্ষ্য : সমবায়ীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি, অকৃষি, আর্থিক ও সেবা খাতে টেকসই সমবায় গড়ে তোলা।

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

History of Cooperative

সমবায়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

        গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে সমবায়ের গর্ব করার মত সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে সমবায় আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। ১৮২১ সালে রবার্ট ওয়েন ইংল্যান্ডের ‘নিউ লানার্ক’ নামক শহরে ও তার আশেপাশের শ্রমিকদের সংগঠিত করে সমবায় গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। সমবায়ের মাধ্যমে নিজস্ব সঞ্চয় সংগ্রহ করে শ্রমিকরা তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্রতী হয়। রবার্ট ওয়েনের এ সমবায় কার্যক্রম প্রথম দুই দশকে বেশ সফলতা প্রদর্শন করে। পরে ব্যবস্থাপনার ত্রুটিজনিত কারণে চল্লিশের দশকে এসে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। রবার্ট ওয়েন যেহেতু আধুনিক সমবায়ের কাঠামোগত ভিত রচনা করেছিলেন তাই তাঁকে ‘আধুনিক সমবায়ের জনক’ (Father of Modern Cooperatives) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

            প্রকৃতপক্ষে, আধুনিক সমবায় আন্দোলনের জয়যাত্রা শুরু হয় ১৮৪৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারের নিকটবর্তী রচডেল (Rochdale) নামক একটি ছোট্ট শহরে। রচডেলের মাত্র ২৮ (আটাশ) জন বুদ্ধিমান শ্রমিক আত্ম-প্রত্যয় ও আত্ম-প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হওয়ার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে ‘রচডেল অগ্রণীদের সমতাবাদী সমবায় সমিতি।’ (Rochdale Pioneers Equitable Cooperative Society)।

          রচডেলের পরবর্তীতে ১৮৯৫ সালের আগস্ট মাসে সফলভাবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা হয় যার নাম দেওয়া হয়  International Cooperative Alliance । উক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা সমবায়ীদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করে। এর পরে স্পেনের বাস্ক প্রদেশে ম্যন্ড্রাগণ সমবায় কর্পোরেশন নামে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় যা অদ্যবধি সমবায়ের সবচেয়ে সফল উদাহরণের অন্যতম।

                 বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রথম সমবায় আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। এ সময়ে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করত। কৃষিই ছিল জনগণের জীবিকার একমাত্র উপায়।

            ১৮৭৫ সালে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহের মূলে ছিল কৃষি ঋণের অভাব, মহাজনী ঋণের চক্রবৃদ্ধিজনিত উচ্চ সুদের হার, কৃষকদের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র। এ প্রেক্ষিতে ১৯০১ সালে ইন্ডিয়ান ফেমিন কমিশনের সুপারিশ মতে এবং তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন কর্তৃক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট (লর্ড এডওয়ার্ড , স্যার নিকলসন ও ডুপার নিক্স) কমিটির সুপারিশ অনুসারে ১৯০৪ সালে তদানীন্তন বৃটিশ ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন ‘সমবায় ঋণদান সমিতি আইন,১৯০৪’ (Cooperative Credit Societies Act-1904)  জারী করেন এবং তদানীন্তন ভারত সরকার পুনরায় নতুন করে ‘সমবায় সমিতি আইন-১৯১২’ (Cooperative Socities Act-1912) জারী করেন। উক্ত আইনে ক্রেডিট ও নন-ক্রেডিট সমবায় সমিতি গঠন এবং সসীম ও অসীম দায় বিশিষ্ট সকল প্রকার সমবায় সমিতি গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  তাছাড়া এই আইনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শীর্ষ সমিতি বা ব্যাংক গঠন করার বিধান ও সন্নিবেশ করা হয়। ফলে দেশের সর্বত্র কৃষিক্ষেত্রে ও অকৃষিক্ষেত্রে সসীম ও অসীম দায়-বিশিষ্ট বিভিন্ন প্রকার সমবায় সমিতি গড়ে উঠতে শুরু করে।

            ভারতবর্ষের কো-অপারেটিভগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য স্যার এডওয়ার্ড ম্যাকলেগানকে প্রধান করে ‘ ইমপেরিয়াল কো-অপারেটিভ ইন ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়। ১৯১৫ সালে ম্যাকলেগান কমিটি সুপারিশ দাখিল করেন। এই কমিটির প্রতিবেদনকে ভারতের জন্য ‘সমবায়ের বাইবেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

            ১৯১২ সালের আইনের আওতায় ১৯১৮ সালে ‘বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল কো-অপারেটিভ ফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়।  ১৯২২ সালে তা ‘বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ব্যাংক’ নাম ধারণ করে।

            তৎকালীন ভারত সরকার ১৯১৯ সালে সমবায়কে প্রাদেশিক বিষয়ে পরিণত করে। প্রাদেশিক সরকারের অধীনে একজন সমবায় বিষয়ক মন্ত্রীও নিয়োগ করা হয়। তবে তখনও ১৯১২ সালেল সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী সমবায়ের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।

            বিশের দশকে পাট ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সমবায়গুলো এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এ গুলোর মাধ্যমে ‘বিক্রয় ও সরবরাহ সমিতি’ এবং ‘কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমিতি’ পাট ব্যবসায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ গুলোর কেন্দ্রীয় সমিতি ‘বেঙ্গল কো-অপারেটিভ হোলসেল সোসাইটি ১৯২৬ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত পাট ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

           সমবায় আন্দোলনকে পূন:চাঙ্গা করে তোলার লক্ষ্যে প্রাদেশিক সরকার ১৯৪০ সালে ‘বঙ্গীয় সমবায় সমিতি আইন-১৯৪০’ জারী করে। ১৯৪২ সালে উক্ত আইনের বিশ্লেষণ সহ ‘সমবায় নিয়মাবলী -১৯৪২’ প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় দেশে দ্রব্যমূল্য অত্যাধিক বেড়ে যায়। ১৯৪৩ সালে প্রদেশব্যাপী দেখা দেয় এক মহা-দুর্ভিক্ষ। অপরদিকে ১৯৪৫ সালে দেশব্যাপী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বেধেঁ ওঠে। শুরু হয় সর্বত্র হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা-হাঙ্গামা। ফলে সমবায় আন্দোলন এক বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।

            ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সমবায় আন্দোলনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানে তখন ২৬,০০০ এর ও বেশি সমবায় সমিতি বিরাজমান থাকলেও এগুলোর অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সমিতিই পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে অবসায়নে দেয়া হয়।

         সরকার ও সমবায়ীদের যৌথ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সরকার সমবায় সমিতিগুলোর ঋণ কার্যক্রম পূনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। গ্রামীণ সমিতিগুলোর পরিবর্তে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এই ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে তখন কৃষকদের তখন সার, বীজ কীটনাশক ডিজেল সরবরাহ করা হতো। রাসায়নিক সার ব্যবহারে সমিতিগুলো তখন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষাবাদ ব্যবস্থার প্রচলনে সমিতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

------------সমবায় গড়ুনসুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অংশীদার হউন-----------